স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টের সঠিক অ্যাপ্লিকেশনের পরিমাণ এবং পদ্ধতি জানা থাকলে আপনি আপনার রুটিনের সম্পূর্ণ বেনিফিট পেতে পারেন।
ক্লিনজার (ফেস ওয়াশ):
পরিমাণ: একটা কয়েনের সমান।
টিপস অ্যান্ড ট্রিকস: ক্লিনজারটি সরাসরি মুখে না লাগিয়ে, প্রথমে হাতে সামান্য পানি দিয়ে ফোম তৈরি করুন। এরপর ৩০-৬০ সেকেন্ড ধরে আলতো করে স্কিনে মেসেজ করুন, যাতে পোরস ভালোভাবে পরিষ্কার হয়। ঠাণ্ডা বা গরম পানির পরিবর্তে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন।
টোনার / এসেন্স:
পরিমাণ: ৫-৬ ফোঁটা।
টিপস অ্যান্ড ট্রিকস: কটন প্যাড ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন, কারণ এটা প্রোডাক্ট নষ্ট করে। হাতের তালুতে নিয়ে মুখে ড্যাব করে লাগান। এই ধাপটি স্কিনকে পরবর্তী সিরামগুলো এবজর্ব এর জন্য প্রস্তুত করে।
হায়ালুরোনিক অ্যাসিড সিরাম:
পরিমাণ: ২-৩ ফোঁটা।
টিপস অ্যান্ড ট্রিকস: স্কিন সামান্য ভেজা থাকা অবস্থায় (টোনার লাগানোর পর) এটি ব্যবহার করুন। হায়ালুরোনিক অ্যাসিড আদ্রতা টেনে নেয়, তাই ভেজা স্কিনে এর কার্যকারিতা বাড়ে এবং এটি স্কিনকে আরও বেশি প্লাম্প করে।
ভিটামিন সি সিরাম:
পরিমাণ: ২-৩ ফোঁটা।
টিপস অ্যান্ড ট্রিকস: সকালে (দিনের বেলায়) ব্যবহার করা আইডিয়াল, কারণ এটা সূর্যের ক্ষতি থেকে স্কিনকে রক্ষা করে।
রেটিনল / অ্যাকটিভ ট্রিটমেন্ট সিরাম:
পরিমাণ: একটা মটরের দানার সমান।
টিপস অ্যান্ড ট্রিকস: শুধুমাত্র রাতে ব্যবহার করুন। ইরিটেশন এড়াতে এই উপাদানটি ময়েশ্চারাইজার লাগানোর পরে ব্যবহার করতে পারেন। (স্যান্ডউইচ মেথড) বিশেষ করে যদি আপনার স্কিন সেনসিটিভ হয় বা আপনি নতুনভাবে রেটিনল শুরু করেন। গলার স্কিন অনেক সেনসিটিভ, তাই গলাতেও অল্প পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত।
*[স্যান্ডউইচ মেথড হলো স্কিনকেয়ারের একটা পদ্ধতি, যেখানে শক্তিশালী উপাদান যেমন রেটিনল, একটা ময়েশ্চারাইজারের দুটো লেয়ারের মাঝখানে ব্যবহার করা হয়। প্রথমে ময়েশ্চারাইজার, তারপর অ্যাকটিভ ট্রিটমেন্ট (রেটিনল সিরাম বা অন্য এক্টিভ সিরাম) এবং সবশেষে আবার ময়েশ্চারাইজার। এই পদ্ধতি অ্যাকটিভ উপাদানের তীব্রতা কমিয়ে স্কিনের ইরিটেশন এবং সেনসিটিভি এড়াতে সাহায্য করে।]*
আই ক্রিম:
পরিমাণ: প্রতি চোখের জন্য একটা চালের দানার সমান।
টিপস অ্যান্ড ট্রিকস: আপনার অনামিকা (Ring Finger) ব্যবহার করে চোখের হাড়ের চারপাশে হালকাভাবে ড্যাব করে লাগান। সরাসরি চোখের পাতার খুব কাছে বা চোখের নিচে চাপ দিয়ে মেসেজ করবেন না।
ময়েশ্চারাইজার:
পরিমাণ: একটা কয়েনের সমান।
টিপস অ্যান্ড ট্রিকস: সিরাম বা ট্রিটমেন্ট অ্যাপ্লাই করার ৫-৬ মিনিট পর ব্যবহার করুন। ময়েশ্চারাইজার লাগানোর সময় সবসময় উপরের দিকে এবং বাইরের দিকে মেসেজ করুন, যা স্কিনকে ফার্ম রাখতে সাহায্য করে। ফেসের পাশাপাশি গলা এবং ঘাড়ও কভার করতে ভুলবেন না।
সানস্ক্রিন:
পরিমাণ: টু-ফিঙ্গার রুল (Two-Finger Rule)।
টিপস অ্যান্ড ট্রিকস: বাইরে বের হওয়ার অন্তত ১৫ মিনিট আগে অ্যাপ্লাই করুন। প্রতি ২ ঘণ্টা পর পর রি-অ্যাপ্লাই করা মাস্ট। মেকআপ করা থাকলে স্প্রে সানস্ক্রিন বা সানস্ক্রিন স্টিক ব্যবহার করে রি-অ্যাপ্লাই করুন। পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যাপ্লাই না করলে এসপিএফ প্রটেকশন কমে যায়।
📌সতর্কতা📌
✔স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টস ব্যবহারের শুরুতে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। আপনি যখন একসাথে অনেকগুলো প্রোডাক্টস ব্যবহার করতে চাইবেন, তখন সঠিক উপায় হচ্ছে একসাথে না ব্যবহার করে, কিছুদিন একটি, এর কিছুদিন পরে আরেকটি যোগ করা।
যেমন:
☀️প্রতিদিন সকালের রুটিনেঃ
ফেইসওয়াশ করে এরপর সানস্ক্রিন এপ্লাই করবেন খুবই সামান্য পরিমাণে।
🌙১ম সপ্তাহে শুধু রাতেঃ
ফেসওয়াশ করে একদম অল্প করে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন।
🌙পরের সপ্তাহে শুধু রাতেঃ
ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে পরিষ্কার করবেন। এরপর ১-২ ফোঁটা টোনার (যদি থাকে)।
🌙পরের সপ্তাহে শুধু রাতেঃ
ফেসওয়াশ করে একদম অল্প করে ১-২ ফোঁটা এসেন্স এপ্লাই করবেন (যদি থাকে)।
🌙পরের সপ্তাহে শুধু রাতেঃ
ফেসওয়াশ করে সিরাম অথবা এম্পুল যেকোনো একটা ১-২ ফোঁটা এপ্লাই (যদি থাকে)।
➡️ রুটিনে যদি ক্লিনজিং অয়েল; অথবা ক্লিনজিং বাম; অথবা মাইসেলার ওয়াটার থাকে সেক্ষেত্রে শুরুর দিকে প্রতিদিন ইউজ না করে সপ্তাহে ১/২ বার করে ইউজ করবেন।
➡️রুটিনে আইক্রিম থাকলে শুরুতেই প্রতিদিন ইউজ না করে সপ্তাহে ১/২ বার ইউজ করবেন।
এভাবে ব্যবহার করলে, নতুন প্রোডাক্ট স্কিনে এডজাস্ট করবে ভালোমত। কেনোনা অনেকগুলো নতুন প্রোডাক্টস একসাথে ব্যবহার করা শুরু করলে স্কিনে রিয়াক্ট করতে পারে অনেক সময়। এবং খেয়াল রাখতে হবে শুরুতে প্রোডাক্টের পরিমাণ একেবারেই অল্প করে করে নিতে হবে। অনেক বেশি পরিমানে নিউ প্রোডাক্টস ব্যবহার করলেও অনেকসময় রিয়াক্ট করতে পারে।
✔এ কারণে হঠাৎ করে সকল প্রোডাক্টস একসাথে শুরু না করে একটা করে করে প্রোডাক্টস এভাবে ব্যবহার করার সাজেশন করছি আমরা।
✔আবার এলার্জি থাকলে কোনোভাবেই নতুন প্রোডাক্টস একসাথে ব্যবহার শুরু করা যাবে না। এলার্জি স্কিনে যেকোন প্রোডাক্টস খুব সামান্য পরিমাণে নিয়ে অন্তত ২ সপ্তাহ ব্যবহার করতে হবে।
যেমনঃ ফেইসওয়াশ করে শুধুমাত্র ১ টা প্রোডাক্ট একদম অল্প করে এপ্লাই করতে হবে। স্কিনে প্রোডাক্ট এডজাস্ট হয়ে গেলে এরপর নতুন আরেকটা প্রোডাক্ট ব্যবহার শুরু করবেন একই নিয়মে গ্যাপ দিয়ে দিয়ে, খুবই সামান্য পরিমাণ ব্যবহার করে। অনেক বেশি পরিমাণে ইউজ করবেন না। এভাবে গ্যাপ দিয়ে দিয়ে ব্যবহার করতে করতে, যখন বুঝতে পারবেন প্রোডাক্টস গুলো স্কিনে এডজাস্ট হয়ে গিয়েছে, এরপরই কেবল সকল প্রোডাক্টস এক সাথে স্কিনে ব্যবহার করা সঠিক সিদ্ধান্ত হবে।